জ্ঞাতব্য
ইবনে জাওযী ছিলেন ’আল-জারহ ওয়াত্ তাদীল’-এর কঠোরপন্থী আলেমদের অন্যতম; আর তিনি এই বইয়ের প্রারম্ভেই উল্লেখ করেন যে তিনি বিশুদ্ধ রওয়ায়াতের সাথে মিথ্যে বিবরণগুলোর সংমিশ্রণ করেননি। (মানে তিনি শুধু বিশুদ্ধ বর্ণনাসম্বলিত ’সীরাহ’-বিষয়ক এ বইটি লিখেছেন; এতে সন্নিবেশিত হাদীসগুলো সহীহ বা হাসান পর্যায়ভুক্ত, যা সনদ কিংবা শওয়াহিদ (সাক্ষ্য)-সূত্রে ওই পর্যায়ে পৌঁছেছে)
দলিল নং – ২৩ [ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (রহ.)]
ইমাম ইবনে আল-মোবারক নিজ ‘আয্ যুহদ’ পুস্তকে, হাকীম তিরমিযী তাঁর ‘নওয়াদিরুল উসূল’ গ্রন্থে, ইবনে আবিদ্ দুনইয়া ও ইবনে মুনদাহ বর্ণনা করেন সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রহ:) থেকে; তিনি হযরত সালমান ফারিসী (রা:) হতে, যিনি বলেন: ”মো’মেনীনবৃন্দের রূহ (আত্মা)-সমূহ এ পৃথিবীর ’বরযখে’ অবস্থান করেন এবং তাঁরা যেখানে ইচ্ছে যেতে পারেন; পক্ষান্তরে ’কুফফার’দের আত্মাগুলো ’সিজ্জিনে’ অবস্থিত….।”
হাকীম তিরমিযী আরও অনুরূপ রওয়ায়াতসমূহ হযরত সালমান ফারিসী (রা:) থেকে বর্ণনা করেন।
ইবনে আবিদ্ দুনইয়া হযরত মালেক ইবনে আনাস (ইমাম মালেক) থেকে বর্ণনা করেন; তিনি বলেন: “এই রওয়ায়াত আমার কাছে এসেছে এভাবে যে মো’মেনীনবৃন্দের আত্মাসমূহ মুক্ত এবং তাঁরা যেখানে চান যেতে পারেন।” [ইমাম সৈয়ুতী রচিত ‘শরহে সুদূর’, ১৬৭ পৃষ্ঠা]
অধিকন্তু, ইবনে কাইয়্যেম জাওযিয়্যা-ও নিজ ‘কিতাবুর রূহ’ বইয়ে এ বিষয়টি সপ্রমাণ করেছে [২৪৪ পৃষ্ঠা, দার-এ-ইবনে-কাসীর, দামেশ্ক, সিরিয়া হতে প্রকাশিত]
দলিল নং – ২৪ [হযরত আবূ আউয়ুব আনসারী (রা.)-এর মাযার শরীফ]
হযরত আবূ আইয়ুব আনসারী (রহ:) মহান সাহাবীদের একজন। তিনি কনস্টিনটিনোপোল-এর যুদ্ধে অংশ নেন। শত্রু সীমানায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই অসুখ বেড়ে গেলে তিনি অসিয়ত (উইল) করেন, “আমার বেসালের পরে তোমরা আমার মরদেহ সাথে নিয়ে যাবে, আর শত্রুর মোকাবেলা করতে যখন তোমরা সারিবদ্ধ হবে, তখন তোমাদের কদমের কাছে আমাকে দাফন করবে।— ইবনে আব্দিল বারর, ‘আল-এসতেয়াব ফী মা’রিফাত-ইল-আসহাব’, ১:৪০৪-৫
অতঃপর ইসলামের সৈনিকবৃন্দ তাঁর অসিয়ত অনুসারে তাঁকে দুর্গের দ্বারপ্রান্তে দাফন করেন এবং শত্রুদের সতর্ক করেন যেন তারা তাঁর মাযারের প্রতি অসম্মান না করে; তা করলে ইসলামী রাজ্যের কোথাও তাদের উপাসনালয়গওলো নিরাপদ থাকবে না। ফলে এমন কি শত্রুরাও তাঁর মাযারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে বাধ্য হয়েছিল। আর মানুষেরাও সত্বর তাঁর মাযার থেকে প্রবাহিত খোদায়ী আশীর্বাদ-ধারা সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন। তাঁরা মাযারে এসে যা-ই প্রার্থনা করতেন, তা-ই তৎক্ষণাৎ মঞ্জুর হয়ে যেতো।
আর হযরত আবূ আইয়ুব (রা:)-এর মাযার কেল্লার কাছে অবস্থিত এবং তা সবাই জানেন….যখন মানুষেরা বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা জানায়, বৃষ্টিপাত আরম্ভ হয়।— ইবনে আব্দিল বারর, প্রাগুক্ত ‘আল-এস্তেয়াব ফী মা’রিফাত-ইল-আসহাব’ (১:৪০৫)
মুজাহিদ বলেন, “দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে মানুষেরা মাযারের ছাদ খুলে দেন, আর বৃষ্টি নামে।”
দলিল নং – ২৫ [ইমাম বায়হাকী]
[হাদীস নং ৩৮৭৯] আবূ এসহাক আল-কারশী (রা:) বর্ণনা করেন, মদীনা মোনাওয়ারায় আমাদের সাথে এক ব্যক্তি ছিলেন, যিনি যখন-ই এমন কোনো খারাপ কাজ সংঘটিত হতে দেখতেন যাকে তিনি বাধা দিতে অক্ষম, তৎক্ষণাৎ তিনি মহানবী (দ:)-এর মোবারক রওযায় যেতেন এবং আরয করতেন, ‘হে মাযারের অধিবাসীবৃন্দ (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এবং শায়খাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) এবং আমাদের সাহায্যকারীমণ্ডলী! আমাদের অবস্থার দিকে কৃপাদৃষ্টি করুন।’ …. [হাদীস নং ৩৮৮০] আবূ হারব হেলালী (রা:) বর্ণনা করেন যে এক আরবী ব্যক্তি হজ্জ্ব সম্পন্ন করে মসজিদে নববীর দরজায় আসেন। তিনি সেখানে তাঁর উট বেঁধে মসজিদে প্রবেশ করেন এবং রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর পবিত্র রওযার সামনে চলে আসেন। তিনি হুযূর পূর নূর (দ:)-এর কদম মোবারকের কাছে দাঁড়িয়ে আরয করেন: ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (দ:), আপনার প্রতি সালাম।’ অতঃপর তিনি হযরত আবূ বকর (রা:) ও হযরত উমর (রা:)-এর প্রতিও সালাম-সম্ভাষণ জানান। এরপর তিনি আবার বিশ্বনবী (দ:)-এর দিকে ফিরে আরয করেন: ”এয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! আপনার জন্যে আমার পিতা ও মাতা কোরবান হোন। আমি আপনার দরবারে এসেছি, কারণ আমি পাপকর্ম ও ভুলত্রুটিতে নিমজ্জিত, আর এমতাবস্থায় আপনাকে আল্লাহর কাছে যেন অসীলা করতে পারি এবং আপনিও আমার পক্ষে শাফায়াত করতে পারেন। কেননা, আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান: ’এবং আমি কোনো রাসূল প্রেরণ করিনি কিন্তু এ জন্যে যে আল্লাহর নির্দেশে তাঁর আনুগত্য করা হবে; আর যদি কখনো তারা (মো’মেনীন) নিজেদের আত্মার প্রতি যুলুম করে, তখন হে মাহবুব, আপনার দরবারে হাজির হয়, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আর রাসূল (দ:)-ও তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন, তবে অবশ্যই তারা আল্লাহকে অত্যন্ত তওবা কবুলকারী, দয়ালু পাবে’ [আল-কুরআন, ৪:৬৪; মুফতী আহমদ এয়ার খান কৃত ‘নূরুল এরফান’ বাংলা সংস্করণ]।” অতঃপর ওই ব্যক্তি সাহাবী (রা:)-দের এক বড় দলের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলতে থাকেন, ’ওহে সেরা ব্যক্তিবৃন্দ যাঁরা (মাটির) গভীরে শায়িত’; ‘যাঁদের সুগন্ধিতে মাটির অভ্যন্তরভাগ ও বহির্ভাগ মিষ্ট স্বাদ পরিগ্রহ করেছে’; ’আপনি যে মাযারে শায়িত তার জন্যে আমার জান কোরবান’; ‘আর যে মাযার-রওযায় পবিত্রতা, রহমত-বরকত ও অপরিমিত দানশীলতা পাওয়া যায়।’ [‘শুয়াবুল ঈমান, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৬০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৩৮৭৯-৮০; আরবী উদ্ধৃতি পিডিএফ আকারে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে ইনশা’আল্লাহ]
দলিল নং – ২৬ [হাফেয ইবনে হিব্বান (রহ.)]
ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ:) নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনাকালে আল-রেযা (রহ:)-এর মাযারে তাঁর তাওয়াসসুলের বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন এবং বলেন,
তুস্ নগরীতে অবস্থান করার সময় যখনই আমি কোনো সমস্যা দ্বারা পেরেশানগ্রস্ত হয়েছি, তৎক্ষণাৎ আমি হযরত আলী ইবনে মূসা রেযা (তাঁর নানা তথা হুযূর পাক ও তাঁর প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক)-এর মাযার শরীফ যেয়ারত করতাম এবং আল্লাহর কাছে সমাধান চাইতাম। এতে আমার দোয়া কবুল হতো এবং পেরেশানিও দূর হতো। আমি এটি-ই করতাম এবং বহুবার এর সুফল পেয়েছি।— ইবনে হিব্বান প্রণীত ‘কিতাবুস্ সিকাত’, ৮ম খণ্ড, ৪৫৬-৭ পৃষ্ঠা, # ১৪৪১১
দলিল নং – ২৭
ইমাম আবূ হানিফা (রহ:) বর্ণনা করেন ইমাম নাফে’ (রহ:) হতে, তিনি হযরত ইবনে উমর (রা:) হতে; তিনি বলেন:
কেবলার দিক থেকে আসার সময় মহানবী (দ:)-এর রওযা-এ-আকদস যেয়ারতের সঠিক পন্থা হলো রওযার দিকে মুখ করে এবং কেবলার দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়াতে হবে; অতঃপর সালাম-সম্ভাষণ জানাতে হবে এই বলে – ‘হে আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর-ই রহমত ও বরকত (দ:), আপনার প্রতি সালাম’।— মুসনাদে ইমামে আবি হানিফাহ, বাবে যেয়ারাতে কবর আন্ নবী (দ:)